আভিধানিক অর্থ এ ঈদ কি ?



ঈদ(عید)আরবী শব্দ।এটার আভিধানিক অর্থ ما یعاود مرۃ بعد اخر

 “একের পর এক যা বার বার আসে।”

শাব্দিক দৃষ্টিতে মিলাদের অর্থ হল জন্ম সাল(ইসমে জরফে জামান)।
আর বর্তমান মিলাদের অর্থ হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শুভাগমনের দিনকে স্মরণ করে ঐ তারিখ বা ঐ মাসে বা যে কোন সময়ে অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে আনন্দ উদ্‌যাপন করা।এ মিলাদ,মৌলুদ বা মিলাদুন্নাবী অনুষ্ঠান যেহেতু যুগ যুগ ধরে পালিত হয়ে আসছে তাই একে “ঈদে মিলাদুন্নাবী”নামে নামকরণ করা হয়েছে।



সামগ্রিক অর্থ ঈদ মানে খুশি,আনন্দ,প্রসন্নতা,যা বার বার আসে ইত্যাদি।সুতরাং মিলাদুন্নাবী যেহেতু বছরের চাকা ঘুরে শান্তির বার্তা নিয়ে আমাদের মাঝে বার বার আবির্ভূত হয়;সেহেতু একে “ঈদে মিলাদুন্নাবী” নামে নামকরণ অধিক যুক্তিসঙ্গত।

ঈদে মিলাদুন্নাবী অর্থ নবী পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শুভাগমন উপলক্ষে খুশি উদযাপন করা,হুজুর  পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শুভাগমনকে নেয়ামত হিসেবে গ্রহন করা এবং হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন সম্পর্কে আলোচনা করা।

পারিভাষিক অর্থ-

আমাদের ইসলামী শরীয়তে অনেক প্রকার ঈদ রয়েছে;যথাঃ-

১.ঈমানী ঈদ।

২.আমলী ঈদ।

৩.সাপ্তাহিক ঈদ।

৪.অন্যান্য আমলী।

৫.অলী-আল্লাহদের ওরস শরীফও ঈদের দিন।


  • ঈমানী ঈদঃ–


‘যে ঈদের সাথে ঈমানদারের সম্পর্ক রয়েছে;সেটাই ঈমানী ঈদ’

ঐ ঈদের মাধ্যমে ঈমানের বাগানে সজীবতা আসে এবং ঐ ঈদ পালনের মাধ্যমে ঈমানী জজবা সৃষ্টি হয়।এ ঈমানী ঈদের নাম “পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নাবী ”

হযরত ফারুকে আযম রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

من عظم مولد النبی صلی اللہ تعالی علیہ و سلم فقد احی السلام

“যে মিলাদুন্নাবী কে মহামর্যাদার সাথে পালন করে এবং যথাযথ সম্মানের মাধ্যমে সমর্থন করে,সে যেন ইসলামকে জিন্দা করল(সুবহানাল্লাহ)।”

কেননা এ মিলাদুন্নাবী’র মাধ্যমে ইসলাম জিন্দা ও মুসলমানের মধ্যে এক অনাবিল আনন্দ উৎসাহ ও প্রেরণার সৃষ্টি হয়।যেহেতু,এ ঈদ তো অন্য কারো ব্যাপারে নয়;বরং মহান রাব্বুল আলামীনের সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত হিসেবে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর শুভাগমনের জন্যই পালিত হয়।


  • আমলী ঈদ

এক.ঈদুল ফিতর(রমযানের ঈদ)

রমযানের পরে ঈদুল ফিতর আসে ।এটাকে ঈদ এ কারনে বলা হয় যে,বান্দা এক মাস রোযা রাখার পর আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বান্দাকে ঈদগাহে নামায শেষে পুরস্কার দান করবেন এবং আল্লাহর রেযামন্দী ফেরেস্তাদের মাধ্যমে প্রকাশ করেন;এ জন্য ঐ দিন বান্দাদের জন্য ‘আনন্দের দিন’, ‘খুশির দিন’ তথা ‘ঈদের দিন’

দুই.ঈদুল আযহা(কোরবাণীর ঈদ)

কোরবানীর মাধ্যমে যেহেতু বান্দা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে এবং আল্লাহ তায়ালার নেয়ামত স্বীকৃতি জানায় আর আল্লাহ তায়ালাও এর প্রতিফলন দিয়ে থাকে।সেহেতু ঈদুল আযহাও কোরবানীর ঈদ হিসেবে সাব্যস্থ।এটা বান্দার আমলের বিনিময়ে হয়।


  • সাপ্তাহিক ঈদ (জুমারদিন)

প্রাগুপ্ত আমলী দু’ঈদ ছাড়াও অনেক ঈদ রয়েছে;তন্মধ্যে জুমার দিন মুসলমানের জন্য ‘সাপ্তাহিক ঈদ’;যা জুমার নামাযের মাধ্যমে পালিত হয়।

মাসয়ালা-১ : জুমা দিবস-ই ঈদে মিলাদুন্নাবী প্রবর্তনের অন্যতম দলীল

বর্ণিত আছে যে,হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর একজন পিতামহ হযরত ক্বাব বিন লুয়াই রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রতি সপ্তাহে জুমার দিনে মক্কার সমগ্র লোকদেরকে আল্লাহর ঘরের আঙ্গিনায় আহবান করে জমায়েত করতেন।তাঁর(হযরত ক্বাব বিন লুয়াই)ললাটে নূরে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা চমকিঁত(জ্বলমল করত)।তিনি এ নূরে পাকের দিকে ইঁঙ্গিত করে জনগনকে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর আগমন বানী শুনাতেন এবং নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর ফাযায়েল তথা অতুলনীয় সম্মান ও মর্যাদার কথাও বলতেন।এ জুমার দিনের নাম তার পূর্বে ‘আরোবা’ ছিল।আর তিনি এ ‘আরোবা’ এর নামকে পরিবর্তন করে ‘জুমা’ নামকরন করেন।যেহেতু তিনি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর আগমনী বার্তা শুনানোর জন্য তথা ঈদে মিলাদের জন্য লোকজনকে জমায়েত করতেন এবং নবীর আগমনের বানী শুনাতেন বিধায় ঐ দিনের নাম ‘জুমা’ হয়েছে।পরবর্তীতে আমাদের ইসলামে ঐ সাপ্তাহিক ঈদের দিনকে জুমার দিনে পরিবর্তন করেন।মূলতঃ এ জুমার দিন সাপ্তাহিক হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর মিলাদ বর্ণনার দিবস ছিল।ইসলামেও ঐ দিনকে স্মরণ রাখার মানসে ঈদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত রাখা হয়েছে।অর্থাৎ,সাপ্তাহিক ঈদে মিলাদুন্নাবী’র নামই ‘জুমার দিন’।সুতরাং যারা ঈদে মিলাদুন্নাবী কে ‘হারাম’ বা ‘বিদয়াত’ বলে,তারা যেন জুমার নামায না পড়ে।কেননা এটাতো ঈদে মিলাদ দিবস আর এজন্যই-তো জুমার নামায হয়েছে।

মাসয়ালা-২:- জুমার দিবস মান্য করাই মিলাদুন্নাবী পালনের স্বীকৃতি

যেহেতু হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর মিলাদে পাকের মাধ্যমে জুমার দিবস প্রবর্তন হয়েছে;সেহেতু ‘জুমা দিবস’ মানা মানে ঈদে মিলাদুন্নাবী কে মান্য করা।আর যারা এটা অমান্য করবে,তাদের সাথে দ্বীন-ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই এবং তারা নবীর উম্মতও দাবী করতে পারবে না বিধায় তারা খারেজী তথা ভিন্ন (মতালম্বী)ধর্মের অনুসারী।ফলে ঈমানদারের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না।এটাই শরীয়তের ফয়সালা।


  • অন্যান্য আমলী ঈদ

মুসলামানের জীবনে শুধু দুই ঈদ নয়,বরং অনেক ঈদ (খুশির দিবস)রয়েছে। প্রাপ্ত ঈদগুলোও ছাড়াও অন্যান্য আমলী ঈদ হচ্ছে,

১.সন্তানের জন্মের দিন(ঈদের দিন)

২.বিবাহের দিন(ঈদের দিন)

৩.পরীক্ষা পাশের দিন(ঈদের দিন)

৪.চাকরী পদপ্রাপ্তির দিন(ঈদের দিন)

৫.সম্মানী পদপ্রাপ্তির দিন(ঈদের দিন)

৬.দেশ ও মাতৃভূমি স্‌বাধীনতা লাভের দিন(ঈদের দিন)

৭.কলেমা পড়ে ঈমান নিয়ে ইহকাল ত্যাগের দিন(ঈদের দিন)


  • অলী–আল্লাহদের ওরস শরীফ ও ঈদের দিন

আল্লাহর বান্দা যে দিন কলেমা পড়ে ঈমান নিয়ে ইহকাল ত্যাগ করবে;ঐ দিনই তাঁর জন্য খুশী বা ঈদের দিন।এ দিনকে ‘ওরস’ শরীফের দিন বলা হয়।ফেরেস্তাদের পক্ষ থেকে যাকে বলা হয়, “দুলহার মত আপনি নিদ্রা যান”।এদিন আপনার খুশির দিন।আর আপনি আনন্দে এ কবরের জগত কাটাবেন।”

 এদিনকে স্মরন করে প্রতি বছর ঈমানদাররা বিভিন্ন এবাদত-বন্দেগী,মিলাদ-মাহফিল,ফাতেহার মধ্যমে ওরস শরীফ উদযাপন করে থাকে।এতে প্রতিয়মান হল যে,শুধু মুসলমানদের জীবনে দুই ঈদ নয়,আরো বহু ঈদ রয়েছে।বিশেষ করে ‘ঈদে মিলাদুন্নাবী’ মুসলমানদের জন্য ঈমানী ঈদ হিসেবে সাব্যস্থ।তাইতো ‘সকল ঈদের সেরা ঈদ-ঈদে মিলাদুন্নাবী’।